,

এক গ্রামে চার ইউনিয়ন!

জেলা প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ: সাধারণত কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠিত হয়। হবিগঞ্জে একটি গ্রামকে ভাগ করা হয়েছে চারটি ইউনিয়নে। ৮৪ দশমিক ৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিশাল এই গ্রামে রয়েছে ১২০টি মহল্লা। জনসংখ্যা ৯৬ হাজারের বেশি। পুরো গ্রাম দেখতে ঘুরতে হয় ১২০ কিলোমিটার রাস্তা।

দাবি করা হয়, এটি পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম, যার নাম বানিয়াচং। আর এ গ্রামের অবস্থান হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায়।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ৫০ খ্রিস্টাব্দে বানিয়াচং গ্রামের গোড়াপত্তন হয়। এক সময় পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো। তখন বানিয়াচং ছিল এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম। শিকাগো নগরে পরিণত হওয়ায় আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে পৃথিবীর বড় গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বানিয়াচং।

ইতিহাস ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার এখানে। বানিয়াচং সমৃদ্ধ হাওর-বাওর, নদী-বিল-ঝিল ও খাল-নালায়। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলাবন লক্ষ্মীবাউর, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীঘি কমলাবতির সাগরদীঘি, ৬শ বছরের প্রাচীন বিথঙ্গল আখড়া, মোগল আমলের প্রাচীন মসজিদ, রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষসহ অনেক পুরাকীর্তি।

সম্ভাবনাময় বানিয়াচং এখনও অনেকটা অবহেলিত। দীর্ঘদিনেও ঘটেনি অবকাঠামোগত উন্নয়ন। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অপ্রশস্থ রাস্তা-ঘাট, যানজট আর দখল-দূষণে নাজেহাল বানিয়াচংবাসী। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা এখানকার মানুষের চিরসঙ্গী।

পরিবেশ কর্মী ও সচেতন মহল বলছেন, ঐতিহাসিক স্থানগুলোর একটু যত্ন নিলে সারা দেশ থেকে এখানে আসবেন দর্শনার্থীরা। শুধুমাত্র পর্যটনকে ঘিরেই বদলে যেতে পারে বানিয়াচংয়ের অর্থনীতির চিত্র।

একটি প্রাইভেট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মুক্তাদির হোসেন সেবুল বলেন, ‘বানিয়াচংয়ের রাস্তাঘাট খুবই খারাপ। এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। যে কারণে অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া যানজট এখানকার প্রতিদিনের বিষয়।’

কলেজ শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বানিয়াচং এক সময় খুবই পরিচ্ছন্ন একটি গ্রাম ছিল। গ্রামের চারপাশে গড়ের খাল নামে ছিল পরিখা। বৃষ্টি হলে পানি এই পরিখার মাধ্যমে নিষ্কাশন হতো। কিন্তু সেই পরিখাগুলো দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।’

উদীচীর সহসভাপতি ইমদাদুল হোসেন খান বলেন, ‘এটি বিশ্বেও বৃহৎম গ্রাম। যে কারণে সারা দেশের মানুষের এই গ্রামের প্রতি একটা আগ্রহ আছে। এখানে হাওর-বাঁওর, প্রাচীন স্থাপত্য আর পুরাকীর্তি রয়েছে। এগুলোর একটু যত্ন নিলে পর্যটনকে ঘিরেই বদলে যেতে পারে বানিয়াচংয়ের অর্থনীতির চিত্র। এতে সরকারও বিপুল রাজস্ব পাবে।’

বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ বলেন, ‘বানিয়াচংকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ চলমান রয়েছে। সে জন্য বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানকে পর্যটকবান্ধব করতেও কাজ চলছে। এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে সুবিদপুরে গড়ে তোলা হচ্ছে হাওরবিলাস নামে কৃত্রিম পর্যটন স্পট। চলমান কাজগুলো সম্পন্ন হলেই এখানকার চিত্র পাল্টে যাবে। তখন অনেক পর্যটক আসবে বানিয়াচংয়ে।’

এই বিভাগের আরও খবর